নাম্বার নাইন সংকট কাটাতে বাংলাদেশ দলে অতিসত্বর দিয়াবাতের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন!

সুলেমান দিয়াবাতেকে কেন আমাদের প্রয়োজন?

এই প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য আপনাদের আগে বিগত বছর দশেকের অবস্থাটা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এইসব ব্যাখ্যা করার পর আমি শেষে গিয়ে বলবো দিয়াবাতেকে কেন প্রয়োজন। বাংলাদেশে কোয়ালিটিফুল নাম্বার নাইন বলতে গেলে সর্বশেষ ছিলেন এনামুল হক ও জাহিদ হাসান এমিলি।এরপর কয়েকজন নাম্বার নাইন উঠে এলেও কেউই পারেননি থিতু হতে। জেমি ডে'র আমলে নাবীব নেওয়াজ জীবন, সুমন রেজাকে দিয়ে চেষ্টা চালানো হলেও কেউই নিজেদের প্রমাণ করতে পারেনি। মতিন মিয়াকেও পরখ করে দেখা হয়েছিল যদিও তিনি প্রথাগত নাম্বার নাইন নয়।বরঞ্চ এতে আরও ক্ষতি হয়েছে। মাঝখানে পুলিশ এফসি'র জুয়েল সম্ভাবনা দেখালেও হারিয়ে গিয়েছেন। সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে পারা সুফিলকে হয়তো নাম্বার নাইন হিসেবে পরখ করে দেখা যেত কিন্তু তাকে হয়তো সেভাবে কেউ ভেবেই দেখেনি।

হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা আসার পর নাম্বার নাইন সংকট দেখে বাধ্য হয়ে মেকশিফট অপশনে চলে গিয়েছিলেন। ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে দুই ফরোয়ার্ড পজিশনে দীর্ঘদিন খেলাচ্ছেন ফাহিম ও রাকিবকে।এদের কেউই প্রথাগত নাম্বার নাইন নয়। তিনি এদের কাকে কোন প্লেয়িং রোলে খেলাচ্ছেন তিনিই হয়তো জানেন। এটা যে পার্মানেন্ট সল্যুশন না সেটা ইতিমধ্যেই ফুটে উঠেছে। হয়তো লোকাল কোনো নাম্বার নাইনকে শুধু বক্স স্ট্রাইকার হিসেবে সেট করা উচিত যার কাজ হবে শুধু ফিনিশিং রোল প্লে করা,গোলস্কোর করা। কিন্তু লোকাল কোনো প্লেয়ার আপাতত রাডারে নেই। যেহেতু আমাদের হাতে আপাতত কোনো অপশন নেই,ভালো গোলস্কোরার নেই আমাদের দ্রুতই অন্য পন্থায় এই বিষয়ের সমাধান করা জরুরী।বর্তমানে আমাদের টিমের সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস একজন গোলস্কোরারের অনুপস্থিতি।এই সংকটের দ্রুত সমাধানের জন্য আমাদের শর্ট টার্ম সল্যুশন অত্যন্ত জরুরী।


দিয়াবাতে এখানে হতে পারে যোগ্য সমাধান।বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য প্রিমিয়ার লীগের যেই ক্রাইটেরিয়া রয়েছে ৫ বছরের সেই শর্ত পূরণ করেছে। দিয়াবাতের বয়স এখন ৩৩ বছর।একজন আফ্রিকান ফুটবলার হিসেবে তার ফিজিক্যালিটি এই বয়সেও তরুণ বাংলাদেশী কিংবা সাউথ এশিয়ান ফুটবলারদের থেকে ভালো।তিনি সহজেই ৪-৫ বছর বক্স স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে ফিনিশিং সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।তার ফিনিশিং যেকোনো সাউথ এশিয়ান নাম্বার নাইনের চেয়ে ভালো, উচ্চতা ভালো হওয়ায় এরিয়ালেও ভালো হবেন, স্ট্যামিনা দারূণ।বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে ৬২ টি ম্যাচ খেলে তার গোলসংখ্যা ৪৪ টি।


বর্তমানে ন্যাচারালাইজড ফুটবলার খুবই সাধারণ ব্যাপার আন্তর্জাতিক ফুটবলে।বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলা কাতার কিংবা এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া,ভিয়েতনাম এরাও ন্যাচারালাইজড ফুটবলারের পথে ছুটছে। কারণ সংকট সমাধানে লং টার্মের জন্য বসে না থেকে শর্ট টার্মে একটা সমাধান চাচ্ছে। সবাই এটা বুঝতে পারলেও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কেন উদাসীন বোধগম্য নয়। দিয়াবাতে অনেক বার সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান।তবুও কেন তার অন্তর্ভূক্তি নিয়ে তোড়জোড় নেই ফেডারেশনে? এমন কথা শোনা যায় ফুটবল ফেডারেশন ও দিয়াবাতে উভয়ের মধ্যেই কমিনিউকেশনে গ্যাপ রয়েছে। তাই যদি হয়ে থাকে এখানে ফেডারেশনের এগিয়ে আসা উচিত।


সবার আগে বুঝতে হবে দিয়াবাতে বাংলাদেশের হয়ে খেললে লাভটা আসলে কার? বাস্তবিকভাবে বললে দিয়াবাতের হয়তো অর্থের যোগান হবে কিছুটা, এর বাইরে তেমন একটা অর্জনের কিছু আসলে নেই, বাংলাদেশের মত নিয়মিত ১৭০ র‍্যাংকিংয়ের বাইরে থাকা দেশের হয়ে খেলে।লাভটা হবে বাংলাদেশ ফুটবলের। দিয়াবাতে যদি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে নামেন ফরোয়ার্ড পজিশনে বাংলাদেশ দলের সেরা প্লেয়ার হিসেবেই নামবেন। হামজা আসছে, এখন যদি দিয়াবাতেকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় বাংলাদেশ দল সবচেয়ে সেরা টিম কম্বিনেশন পাবে। আমাদের টার্গেট সাফ না, আমাদের টার্গেট হবে এশিয়ান কাপ। দিয়াবাতে এবং হামজা একসাথে খেললে এটা সম্ভব, খুবই সম্ভব।শুধু হামজা আসলে আমাদের মিডফিল্ডের শক্তি হয়তো বাড়বে। কিন্তু গোলস্কোরিং খরা কাটাতে নাম্বার নাইন হিসেবে কাউকে লাগবেই।


যেখানে বিশ্বকাপজয়ী স্পেন ২০১৮ বিশ্বকাপে নাম্বার নাইন সংকট উপলব্ধি করে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ডিয়েগো কস্তাকে খেলিয়েছিল সেখানে আমাদের এত অহম কিসের? ইগো প্রবলেম নাকি স্বদিচ্ছার অভাব? কোনটা? ন্যাচারালাইজড ফুটবলার নিতে যেখানে বিশ্বকাপজয়ী দল দুইবার ভাবছে না সেখানে আমাদের সমস্যা কোথায়? শুধু হামজা আসলেই হবে না,দিয়াবাতেকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
Previous Post Next Post

Advert1

Advert2

نموذج الاتصال