চারটি বুলেটের আঘাতও যাঁকে থামাতে পারেনি!


চারটি বুলেটের আঘাতও যাঁকে থামাতে পারেনি! 

১৯৯০ সালের ১০ই এপ্রিল। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে জন্ম নেয় ছোট্ট এক ফুটফুটে শিশু। জন্মটা ডেনমার্কে হলেও তার পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগে। 

ছোট বেলা থেকেই তার অসম্ভব ভালোবাসা ছিল ফুটবলের প্রতি। চেয়েছিলেন একজন বড় মাপের ফুটবলার হবেন। সুযোগটাও এসে যায় খুব তাড়াতাড়ি। ডেনমার্কের অন্যতম ক্লাব এফসি কোপেনহেগেনের জুনিয়র টিমের হয়ে খেলার ডাক পান। জুনিয়র টিমের হয়ে নিজের প্রথম ম্যাচেই করেন গোল, দলও জয় পায় তার একমাত্র গোলে। এরপর এফসি কোপেনহেগেন ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেয় অদূর ভবিষ্যতে তাকে মূল দলে অন্তর্ভুক্ত করার। সেই মোতাবেক ক্লাবের সাথে চলতে থাকে নিয়মিত অনুশীলন। 

কিন্তু কোনো একদিন হুট করে বদলে যায় সব দৃশ্যপট। তখন তার বয়স ছিল কেবল সতের। স্কুল থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে যান তিনি। চার চারটি বুলেটে এসে বিদ্ধ হয় শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে সাত মাস কোমায় থেকে আবারও সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। তবে ডাক্তার স্রেফ জানিয়ে দেন আজীবনের জন্য আর ফুটবল খেলা হবে না তার। 

তারপর একসময় ছেড়ে দিতে যাচ্ছিলেন ফুটবল। তবে এফসি কোপেনহেগেনের তৎকালীন কোচের অনুপ্রেরণায় তিনি আবারও ফুটবলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভয়ংকর সেই দূর্ঘটনার পর তিনি শারীরিকভাবে আগের চেয়ে কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েন। তবে তারপরও পরিশ্রম আর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। 

একদিন সিদ্ধান্ত নেন নিজের দেশ বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন। ২০১১ সালে জাতীয় দলে ট্রায়াল দিতে বাংলাদেশে আসেন তিনি। ইউরোপীয়ান শীতপ্রধান দেশ থেকে হুট করে বাংলাদেশে আসায় এই দেশের আবহাওয়ার মানিয়ে নিতে যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছিল তার। ট্রেনিংয়ে তার বেগতিক অবস্থা দেখে সেদিন হাস্যরসে মেতেছিলেন টিমের কোচিং স্টাফসহ কয়েকজন খেলোয়াড়। আবারও ডেনমার্কে ফিরে যান তিনি।

২০১৩ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ টিমের কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ তাকে সুযোগ করে লাল-সবুজ জার্সিটা গায়ে জড়ানোর। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জিতে নেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার। ২০১৮ সালে দায়িত্ব পান দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার। 

এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি আর কেউ নন, আমাদের সবার প্রিয় ক্যাপ্টেন জামাল ভূঁইয়া।

প্রিয় ক্যাপ্টেন, দীর্ঘজীবী হউন। আপনাকে দেখে সদ্য ফুটবলে লাথি দেওয়া ছয় বছরের বাচ্চাটাও স্বপ্ন দেখে একদিন বড় মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকাটাকে হিমালয়ের চূড়ায় আরোহন করাবে। 
Previous Post Next Post

Advert1

Advert2

نموذج الاتصال