বিশ্ব ফুটবল একদিকে গেলেও বাংলাদেশের ফুটবল এগিয়ে যাচ্ছে তার বিপরীতে। ইউরোপীয়ান টপ-৫ লীগ সহ, উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা মহাদেশেও খেয়াল করলে দেখতে পাবেন তাদের ফুটবল চর্চাটা হয় প্রদেশ বনাম প্রদেশ কিংবা অঞ্চল বনাম অঞ্চলের ভিত্তিতে। যার ফলেই আজকে গড়ে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা,ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লিভারপুল ক্লাবের ধ্রুপদি লড়াই গুলি।
রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা শুধু ক্লাব নয়, এরা প্রতিনিধিত্ব করে মাদ্রিদ আর কাতালুনিয়ার হয়ে।তেমনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, সিটি প্রতিনিধিত্ব করে ম্যানচেস্টার শহরের। পিএসজি প্রতিনিধিত্ব করে প্যারিসে কিংবা এএস রোমা প্রতিনিধিত্ব করে রোমের হয়ে। শুধু এরা নয়,ইউরোপের প্রায় সব ক্লাবগুলিই তাদের অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে।
যার হাওয়া লেগেছে পাশের দেশ ভারতেও।
অতীতে ভারতের প্রধান ফুটবল ছিলো কলকাতা লীগ,অনেক বড় বড় তারকা প্লেয়ার'রাই কলকাতায় খেলার জন্যে মুখিয়ে থাকতো।সময় পাল্টেছে,ভারতীয় ফুটবলও ধীরে ধীরে ইউরোপীয়ন ক্যাটাগরির ফুটবল অবকাঠামো গড়ে তুলতেছে।যার ধরুন আজকে প্রদেশ/শহরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতেছে এটলেটিকো ডি কলকাতা,এফসি গোয়া সহ আরো অনেক ক্লাবগুলি। তারা ফুটবলের ফোকাস'টা ধীরে ধীরে অঞ্চলের দিকে নিয়ে এসেছে।
আর এখন ISL তো উপমহাদেশের সেরা লীগ।।
ফিউচারে ভারত আরো প্রদেশ ভিত্তিক দল তৈরী করবে,আর I league এর কাজ থাকবে ফুটবলার তুলে আনা।যেমনটা ইউরোপীয়ান ক্লাবগুলিতে একাডেমিক ভাবে হয়।
ঠিক এই জায়গাতেই আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।আমাদের ফুটবল'টা হওয়া উচিত ছিলো বিভাগ বনাম বিভাগ,শহর বনাম শহরের ভিত্তিতে।।
কথাগুলো খারাপ শুনালেও এটা বাস্তব যে আমাদের ফুটবল'টা এখনো ঢাকার ভেতর বন্ধি।
এক মতিঝিল পাড়াতেই যত ক্লাব আছে তাতেই ঢাকা লীগ চালিয়ে নেয়া যাবে।
সময় পাল্টেছে,যুগ পাল্টেছে এবার উচিত ভিন্নভাবে ফুটবল'টাকে ঢেলে সাজানো।
অতীতে আবাহনী-মোহামেডানের লড়াই ছিলো আজকের এল ক্ল্যাসিকোর মতো,সময়ের পরিবর্তনে সেই জৌলুস আর নেই।
আপনি মুখের কথায় ফুটবল'কে যতই দেশের বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলুন না কেনো আদৌতে সেটা কখনো হবে না যতদিন না অঞ্চল ভিত্তিক ক্লাব প্রতিনিধিত্ব করবে।
আজকের সময়ে বসুন্ধরা,সাইফ,আবাহনী,শেখ জামালের ম্যাচে কতগুলো দর্শক হয়?খেলায় উত্তেজনা আসে??
কিন্তু অন্যভাবে ভেবে দেখুন তো যদি ক্লাবগুলো ঢাকা,চট্টগ্রাম,সিলেট,খুলনা সহ আরো বড় বড় শহরের নামে হতো তাহলে ফুটবলের উত্তেজনাটা কই যেতো? দেশের সব বড়বড় বিভাগ, শহরগুলোকে নিয়ে ১৫/১৬ টা দল বানালে বিপিএল আয়োজন করা যেতো।
আজকাল মানুষ আবাহনী-মোহামেডান এর খেলা হলে দেখতেও চায় না,কিন্তু ম্যাচটা যদি ঢাকা-চট্টগ্রামের মাঝে হয় কিংবা এভাবে এক শহরের বিপক্ষে অন্য শহরের হয়? তাহলে ওই জেলা কিংবা ওই বিভাগের লোকজন নিশ্চয়ই তার শহরকে,জেলাকে,সাপোর্ট দিতে মাঠে যাবে।আর এভাবেই মাঠে ফিরে আসবে ভক্তরা।সারাজীবন ঢাকার ভেতর ফুটবল'টা রেখে লীগের সময় একেক বিভাগে একেক দলের খেলা দিলে হয়তো আপনি অল্পকিছু সাপোর্টার পাবেন,বলতে পারবেন ফুটবল'টা সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে।আদৌ কি সেটা সম্ভব??
আপনি রংপুরে যতই বসুন্ধরা কিংসের, কিংবা নোয়াখালিতে নোফেলের হোম ভেন্যু দেন না কেনো মাঠে দর্শক আনতে গেলে আপনাকে অঞ্চল বনাম অঞ্চল ফুটবলে ফোকাস দিতে হবে।আর দর্শকরা মাঠে আসা মানেই ফুটবলের জৌলুস ফিরে আসা।।
বাফুফে চাইলেই রেলিগেটেড বিহীন ১৬ টা দল দিয়ে বিপিএলের আয়োজন করতে পারে।সাথে fifa,aFc এর নিয়ম অনুযায়ী ক্লাবের একাডেমি হিসেবে আবাহনী,মোহামেডান সহ ১৬ টা স্পোর্টিং ক্লাবকে ওই ১৬ টি শহরের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে চাইলে।আবার এই একাডেমীগুলিকে দিয়েই ২য় স্তরের ফুটবল চালিয়ে নেয়া সম্ভব।এতে অঞ্চল বনাম অঞ্চলের খেলাও হবে,পাশাপাশি একাডেমিও মাঠে থাকবে,খেলা হবে,পাইপলাইন শক্ত হবে,দর্শকও আসবে।
আর ওই সকল একাডেমীতে প্লেয়ারে যোগান দিবে ঢাকা,চট্টগ্রাম সহ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোটছোট ক্লাবগুলি।
আর এভাবেই শেকড় থেকে শেকড়ে পৌছাবে বাংলার ফুটবল।ফিরে আসবে আশি,নব্বইয়ের দশকের জৌলুসও।
আর এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে শহরের প্রতিনিধিত্ব করা ক্লাবগুলির স্টেডিয়াম।আসবে প্রচুর ইনকাম।পাশাপাশি UCL,Europa এর আদলে চাইলেই সার্কভুক্ত ৭ দেশকে নিয়ে SCL (Saff champions league)এর মতো আসরও মাঠে নামানো যাবে। এতে প্রচুর খেলাধুলা হবে,তিলে তিলে গড়ে উঠবে বাংলার ফুটবল।
SCL নামানোর জন্যে ৭ দেশের মাঝে ৫ দেশের চ্যাম্পিয়নের পাশাপাশি ভারত থেকে ৩ টা,বাংলাদেশ থেকে চ্যাম্পিয়ন,রানার্সআপ দিয়ে মোট ১০ দল দিয়েই আসর শুরু করা যেতে পারে।২ গ্রুপে ৫ টি করে দল,হোম এওয়ে ভিত্তিতে ম্যাচ।।
কিন্তু আদৌ বাফুফে,ক্রীড়া পরিষদ এভাবে প্রফেশনাল হবে তো???
যদি নাই-বা হয়ে থাকে তাহলে কখনোই আমাদের ফুটবলে শক্তিশালী হওয়া সম্ভব হবে না।
(ব্যাক্তিগত মতামত,কারো খারাপ লাগলে আলোচনা করুন কমেন্ট করে,কিন্তু ব্যাক্তিগত আক্রমণ করবেন না প্লিজ)
লেখা: মোহাম্মদ আবু জুবাইর
Tags
bangladesh