সালাউদ্দীনের আমলনামা!


দাবীটা আজকের বা কালকের নয়, প্রায় বছর চারেক পুরানো। পুরো বিশ্ব তখন মহামারী কোভিডে থমকে আছে, ঠিক সে সময় মোটামুটি সকলকে অবাক করে দিয়েই রব ওঠে, "সালাউদ্দিন হটাও"। সেবারে অবশ্য প্রবল বিরোধীতার মুখে থাকা সত্ত্বেও সালাউদ্দিন নির্বাচনটা ঠিকই করেছিলেন এবং গদি আঁকড়ে রেখেছিলেন।

তবে সেবারে নির্বাচন পূর্ববর্তী ইশতেহারের আলাপ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, সেটাই হবে বাফুফে সভাপতি পদে তাঁর সর্বশেষ নির্বাচন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হবার অন্তিমলগ্নে এসে মেয়াদকালীন সময়কার বহু প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গবার পর ভাঙ্গলেন তিনি এটাও, সত্তরোর্ধ্ব এই ভদ্রলোক বলে বসলেন তিনি আবারো নির্বাচনে দাঁড়াতে চান এবং বেশ গর্বভরেই নিজের ব্যর্থতাকে থোড়াই কেয়ার করে জোরেশোরেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন নির্বাচনের।

সালাউদ্দিন নিজের পথে ঠিক মতোই আগাচ্ছিলেন, তবে সকল হিসাব পাল্টে যায় গত ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর। আওয়ামীলীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট কাজী সালাউদ্দিনের শেষটা তখন অনেকেই দেখে ফেলেছিলেন, তবে আসন্ন ২৬শে অক্টোবরের সভাপতি পদের নির্বাচনে লড়বার জন্য সালাহউদ্দিন তখনও ছিলেন অটল; এ যেনো ভাঙ্গলেও না মচকানোরই মতো। তবে প্রবল প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদের মুখে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হলেন তিনি, নির্বাচন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিলেন রেকর্ড চারবারের বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।

একজন খেলোয়াড় হিসেবে কাজী সালাউদ্দিন ছিলেন অনন্য পর্যায়ের, তারকা যাকে বলা যায়। তর্কসাপেক্ষে তাঁকে বলা য়ায় দেশের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারও। ফলশ্রুতিতে তিনি যখন ২০০৮ সালে মেজর জেনারেল (অব:) আমিন আহমেদ চৌধুরীকে নির্বাচনে পরাজিত করে দেশের ফুটবলের প্রধানকত্তা বনে যান, তখন অনেকেই তাঁকে ঘিরে বুনেছিলো আশার জাল। প্রত্যাশা ছিলো, খেলোয়াড় সালাউদ্দিনের মতো সংগঠক সালাউদ্দিনও শেষ মুহূর্তে দলের পক্ষে জয়সূচক গোল বের করে আনবেন, অমানিশা কাটিয়ে আবারো জেগে উঠবে দেশের ফুটবল। তবে চার দফায় নিজের ১৬ বছরের সভাপতিকালীন জীবনে ১৮ বার কোচ পাল্টানো সালাউদ্দিন সম্ভাবনা যা জাগিয়েছিলেন, তার সবটাই ছিলো স্রেফ কাগজে-কলমে; বাস্তবে ছিলো সবটাই ভাঁড়ে ভবানী। ২০১১ সালে আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসিসমেত আর্জেন্টিনা এবং নাইজেরিয়াকে দেশে আনিয়ে একটি প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত করে সালাউদ্দিনের বাফুফে, বলা হয়েছিলো দেশের ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে এবং ফুটবলারদের উজ্জীবিত করতেই নাকী সে আয়োজন। যদিও আদতে এতে দেশের ফুটবলের লাভ হয়নি বিশেষ উপরন্তু এটাকেই বলা যায় দেশের ফুটবলের সাথে সালাউদ্দিনের সর্বপ্রথম প্রতারণা। এরপর সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বাফুফে জন্ম দেয় এক ন্যাক্কারজনক কান্ডের। ২০১২-১৪ সাল পর্যন্ত বাফুফে যে খরচ দেখিয়েছে, তা ছিলো রীতিমতো অবিশ্বাস্য। সে খেরোখাতায় ফিফা সভাপতির একদিনের খরচ দেখানো হয়েছিল ৯০ লাখ ৯২ হাজার ৭৭৪ টাকা। পরবর্তীতে জানা যায়, বাংলাদেশ সফরে সভাপতির যাবতীয় খরচ ফিফা বহন করে। বাফুফের দেওয়া খরচের তথ্যটি ছিলো সম্পূর্ণরূপে ভূয়া এবং বানোয়াট।

সালাউদ্দিনের কর্মকান্ডের ব্যাপারে বলতে হলে সলিডারিটি কাপ কান্ডের কথা না বললেই নয়। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে সুযোগ না পাওয়া দলগুলো নিয়ে সলিডারিটি কাপের আয়োজন করে এএফসি। নিশ্চিত ভরাডুবি জেনে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে সালাউদ্দিন ওই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলকে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। ফলশ্রুতিতে অবিবেচনাপ্রসূত এ সিদ্ধান্তের ফলে এএফসি বাংলাদেশকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করে, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে নেপাল, বাহরাইন ও বুরুন্ডিকে তাদের আর্থিক পুরষ্কার প্রদানে টালবাহানা করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু কাপ আয়োজনের নামে বাজেট নিয়েও করা হয়েছিলো কারচুপি, পাঁচ কোটি টাকা বাজেটকে দেখানো হয়েছিলো ১৫ কোটিতে।

এছাড়াও সালাউদ্দিনের বাফুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা ও উত্তোলনে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে বেশ। ইস্টার্ন ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা জমা ও উত্তোলন নগদে হয়েছে। যদিও নিয়মানুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানের লেনদেন চেকের মাধ্যমে হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিষয়টি বাফুফের লেনদেনে অনিয়ম ও দুর্নীতিকেই ইঙ্গিত করে। এ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নগদ জমা ও উত্তোলনের মাধ্যমে সালাউদ্দিন গং কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ।

বাফুফে সালাউদ্দিনের আমলে যেসব অবর্ণনীয় অনাচার করেছে, সেসবের মধ্য থেকে অ্যাকাডেমী কেলেঙ্কারির কথা না বললেই নয়। ফুটবল অ্যাকাডেমী করার জন্য সিলেটে বিকেএসপি পেয়েছিলো বাফুফে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করে অ্যাকাডেমীর জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামও কিনে দিয়েছিলো, ফিফাও দিয়েছিলো প্রায় সাত লাখ ডলার অনুদান। কিন্তু সেই সাত লাখ ডলার ভোজবাজির মতো উড়িয়ে দিয়েছিলো বাফুফে। বাফুফের কোনো অডিট রিপোর্টেই অ্যাকাডেমি পরিচালনার জন্য ফিফার দেওয়া সাত লাখ ডলারের কথা উল্লেখ নেই। কয়েক মাস নামমাত্র পরিচালনা করে এরপর অ্যাকাডেমিটি বন্ধই করে দেয়া হয়।

এছাড়াও বাফুফেকে দেওয়া সরকারের ২০ কোটি টাকা গায়েব করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। লংকা-বাংলা ফাইন্যান্সে স্থায়ী আমানত হিসাব করলেও বছর না ঘুরতে সেই স্থায়ী আমানত ভেঙে অর্থ তুলে নিয়েছে বাফুফে। সারা দেশে ফুটবল উন্নয়নে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাফুফেকে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছিলো- "ফুটবল খেলার দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে তহবিল গঠনের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অনুকূলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ের ক্রীড়া সংস্থার মঞ্জুরির আওতায় অন্যান্য অনুদান খাতে এককালীন সরকারি অনুদান হিসাবে ২০ কোটি টাকা দেওয়া হলো। কেবল ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাফুফে কর্তৃক কোনো সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নয়, বরং এ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হলে তা থেকে অর্জিত মুনাফা ফুটবলের নানাবিধ উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে হবে।" অথচ অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া ২০ কোটি টাকার পুরোটাই লোপাট করে ফেলেছে বাফুফে। এ অর্থের কোনো হদিসই নেই বাফুফের অডিট রিপোর্টে। ২০২০ সালে সরকারের দেওয়া বাজেট বরাদ্দের প্রথম কিস্তির ১০ কোটি টাকা খরচ না করেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে হিসাববিবরণী জমা দিয়েছিল বাফুফে। বাফুফে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ের যে হিসাববিবরণী জমা দিয়েছে, এর পুরোটাই শুভংকরের ফাঁকি। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হলো, সরকারের রাজস্ব বিভাগে আয়কর বাবদ ৫০ লাখ টাকা জমা দেওয়ার তথ্য হিসাববিবরণীতে রয়েছে। অথচ ট্যাক্স বাবদ একটি টাকাও জমা দেয়নি বাফুফে। বিল-ভাউচার জমা না দিয়েই বাকি ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে নিতে তৎপরতা চালিয়েছিলেন বাফুফের কর্মকর্তারা। কয়েক দফা যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেন তারা। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বাজেটের বাকি ১০ কোটি টাকা বাফুফের অনুকূলে ছাড়করণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। খরচের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী না পাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী কিস্তির টাকা চাওয়ার কোনো নজির নেই। সরকারি অর্থ বরাদ্দের এ শর্তের কথা হয়তো বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় কিস্তির ১০ কোটি টাকাও ছাড় করে। তখন বাফুফে ক্রীড়া পরিষদের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল, দ্বিতীয় কিস্তির ১০ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত হিসাবে রাখা হবে। ওই স্থায়ী আমানত থেকে পাওয়া লভ্যাংশ ফুটবলের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। কিন্তু ঘটেছে ঠিক উলটো। ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর লংকা-বাংলা ফাইন্যান্সে ১০ কোটি টাকার মধ্যে এক বছর মেয়াদি ৯ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত রাখা হয়। বাকি এক কোটি টাকা খরচ দেখায় বাফুফে। বছর ঘুরতেই (৭ সেপ্টেম্বর ২০২১) স্থায়ী আমানত ভেঙে ফেলে বাফুফে। শুধু তাই নয়, নয় কোটি টাকার আমানতের বিপরীতে কয়েক দফা ঋণ নেয় বাফুফে। ফলে মেয়াদ শেষে লভ্যাংশ দূরে থাক, মূল টাকা পাওয়াই দায় হয়ে পড়েছিল বাফুফের। প্রায় দুই বছর আগে সরকারি বরাদ্দের ওই টাকা হাপিস করে ফেললেও বিষয়টি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে থেকে যায়।

বাংলাদেশ ফুটবলের ইতিহাসে বিদেশী কোচদের সাথে ভাতা নিয়ে দেনদরবার করবার নজিরটা মূলত শুরু হয়েছলো সালাউদ্দিনের আমলেই। দুই সাবেক ডাচ কোচ ডি ক্রুইফ ও রেনে কোস্টারের পাওনা ছিল ৯০ হাজার ইউরো। কিন্তু তাঁদের নাম ব্যবহার করে আড়াই কোটি টাকা নিজের পকেটে পুরেছিলেন সভাপতি। ব্রিটিশ কোচ জেমি ডের আয়কর বাবদ ২৫ লাখ টাকা ও পল স্মলির এক কোটি টাকা রাজস্ব বিভাগে জমা না দিয়ে তাও পকেটে ভরেছেন সালাউদ্দিন। 

সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে রয়েছে সুষ্ঠু সাংবাদিকতায় বিঘ্ন এবং হলুদ সাংবাদিকতাকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগও। বাফুফের হাজারো অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো সাংবাদিক প্রতিবদ করে কলম চালালেই প্রথমে তাকে দেয়া হতো আবেগ মিশ্রিত হুমকি, বলা হতো- "বাফুফের বিরুদ্ধে কথা বলার মানে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা"। আর এতেও যখন কাজ হতো না, তখন চলতো নিষিদ্ধ করবার নোংড়া খেলা আর রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হেনস্তা করা। যার জের ধরে দেশের বর্ষীয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক মোজাম্মেল হক চঞ্চলকে আজীবনের জন্য ফুটবল অঙ্গন থেকে করা হয়েছে নিষিদ্ধ, হয়েছে তাঁর নামে মিথ্যে মামলাও।

অবশেষে সালাউদ্দিনের কবল থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দেশের ফুটবল, সরে যাচ্ছে তাঁর কালো থাবা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এ অঙ্গন থেকে। তবে বিদায়লগ্নে সালাউদ্দিনের নামের পাশে ব্যর্থতা হাজারো হলেও বেশকিছু অর্জনের কথা না বললেই নয়। সালাউদ্দিন পূর্বযুগে যেখানে তিন মৌসুমে স্রেফ একটা লীগ হবারও নজির ছিলো সেখানে তিনি লীগটা মাঠে নামিয়েছিলেন নিয়মিতই। ফুটবলারদের সে অর্থে কোনো দাবী নিয়ে তাঁর আমলে দাঁড়াতে হয়নি, বেশ সমৃদ্ধ কিছু পৃষ্ঠপোষকের বন্দোবস্তও করেছিলেন তিনি৷ সালাউদ্দিনের আমলেই দেশের কোনো ক্লাব প্রথমবারের মতো খেলেছে এএফসি চ্যাম্পিয়ব্স লীগের বাছাইপর্বে। গোড়া থেকেই সালাউদ্দিনের মূল নজরটা জাতীয় দলকে ঘিরে আবর্তিত হলেও নারী দল এবং বয়সভিত্তিক দলও তাঁর সময়ে পেয়েছে যথেষ্ট সাফল্য। প্রথম দফাটা কোনোভাবে কাটাবার পর দ্বিতীয় দফায় তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায়, অতঃপর পরবর্তী দু'দফায় আবারো পদে ফিরেছেন ভোটে জিতেই। সময়ের সাথে সাথে জাতীয় দলের প্রতি তাঁর মনোযোগ বেড়েছে বৈ কমেনি, তবে এর ফলটা ছিলো হতাশাজনক। মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ের পাশাপাশি মূলদলটাও জিতেছে সাফের শিরোপা, সম্প্রতি সাফ শিরোপা আসলো ছেলেদের অনূর্ধ্ব-২০ বিভাগেও। সালাউদ্দিনের আমলে দেশে সাফের শিরোপা বলতে কেবল এ কয়টিই। উপরন্তু প্রীতি ম্যাচ, বিদেশে ট্রেনিং ক্যাম্প, প্রচুর বিদেশী কোচিং স্টাফ আর সুবিধা পাওয়া জাতীয় দল দিনকেদিন সরেছে কেবল আঁধারের দিকেই। তাঁর আমলেই নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন র‍্যাংকিং (১৯৭ তম) দেখেছিলো বাংলাদেশ, ছিলো নির্বাসনেও। অথচ প্রতিশ্রুতি তাঁর ছিলো দলকে ১৫০ এর ওপরে নিয়ে আসার, বলেছিলেন নিজের প্রথম দফায় ক্ষমতা নেয়ার পর। তখন দলের অবস্থান ছিলো ১৮০-তে। আর বিদায় যখন নিচ্ছেন, সেটা তখন আরো চার ধাপ পিছিয়ে ১৮৪-তে। ব্যর্থতা বললে তাঁর নামের পাশে জুড়ে দেয়া যায় দেশের ফুটবলকে সম্প্রসারিত করতে না পারার কথাটিও। তাঁর সময়ে ফুটবলটা হয়ে গিয়েছিলো ঢাকা কেন্দ্রিক, এর বাহিরে কোনো উদ্যোগ বাফুফে এ কয়বছরে একদমই নেয়নি। সবশেষে আর্থিক কালিমা। বিদায়লগ্নে সালাউদ্দিন অন্তত এখন অবধি আর্থিক কোনো কারচুপির দায়ে সে অর্থে অভিযুক্ত না হলেও তাঁর অন্যতম সহচর আবু সালাম মুর্শেদি এবং আবু নাঈম সোহাগের কাঁধে ঝুলছে ফিফা কর্তৃক আনিত আর্থক অনিয়মের অভিযোগের খড়গ, বিতর্ক আছে মাহফুজা আক্তার কিরণকে নিয়েও। ফলে সালাউদ্দিন নাহয় প্রত্যক্ষভাবে নির্দোষ, কিন্তু.... বাস্তবতা কী আসলেই তাই বলছে??

সে যাক, আপাতত সবচেয়ে বড় আশার কথা এই যে কাজী সালাউদ্দিন যুগ শেষ যেহেতু হলো সেহেতু দেশের ফুটবল আবারো আশার আলো দেখবার প্রত্যয়ে উদ্ভাসিত হতেই পারে।
Previous Post Next Post

Advert1

Advert2

نموذج الاتصال