একজন বিপ্লব ভাট্টাচার্য, পর্দার আলাড়ে থাকা একজন হিরো!
লেখা: মিনহাজ মাহমুদ
নামঃবিপ্লব ভট্টাচার্য।
জন্মসালঃ ৭ জানুয়ারি ১৯৮১.
জন্মস্থানঃলাকসাম,কুমিল্লা।
পজিশনঃ গোলকিপার।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্বর্ণিল ফুটবলের সময় ৯০ এর দশকে ১৯৯৪ সালে আবাহনীর হয়ে ফুটবল এ অভিষেক হয়েছিলো দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই গোলরক্ষকের।
নাম তার বিপ্লব ভট্টাচার্য। অটো ফিস্টার কে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়ে বিপ্লবের উত্থানের প্রধান কারিগর হিসেবে।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন। ৯৭ এর প্রিমিয়ার লীগে আবাহনী থেকেই অসাধারন পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে যায়গা করে নেন কুমিল্লার ছেলে বিপ্লব।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে নিজের প্রথম দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হলেও একটি পেনাল্টি সেভ করে জানান দিয়েছিলেন তিনি আসছেন। নতুন এক বিপ্লব আসছেন বাংলাদেশের ফুটবল মাতাতে।
তারপরই তাইওয়ানকে ১-২ গোলে হারানোর ম্যাচেও মাঠে ছিলেন বিপ্লব। যদিও তার পরের ম্যাচেই মালেশিয়ার কাছে ১-০ গোলে হারতে হয় বাংলাদেশ কে।
জাতীয় দলের হয়ে অনেক গুলো ম্যাচ খেলেছেন দেশের অন্যতম সেরা এই গোলরক্ষক।
ক্লাবের হয়ে আগুনে পারফরম্যান্স করা বিপ্লব যায়গা করে নিয়েছেন দেশের সব ফুটবল প্রেমীদের মনে।
মোনায়েম মুন্না, বিপ্লব দের নিয়ে গঠিত আবাহনীর খেলা দেখে তখন চোখ জুড়াতো বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা।
ক্লাবের হয়ে ১৯৯৪-৯৭ পর্যন্ত আবাহনীর জার্সি গায়ে মাঠ মাতিয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৮-১৯৯৯ মুক্তিযোদ্ধায় কাটিয়ে ২০০০ সালে আবার চলে আসেন আবাহনীর ড্রেসিংরুম এ।
২০০১ সালে ফরাশগঞ্জ এর হয়ে মাঠ মাতান বিপ্লব ভট্টাচার্য।
২০০২ সালে মুক্তিযোদ্ধার হয়ে খেলে
২০০৩-৪ পর্যন্ত ব্রাদার্স ইউনিয়নে কাটিয়ে ২০০৫ সালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে যোগদান করেন বিপ্লব।
২০০৬ সালে আবার ঘরের ছেলে ফিরে আসেন ঘরেই। ২০০৬-২০০৯ পর্যন্ত আবাহনীর হয়ে খেলে আবার মুক্তিযোদ্ধায় যোগ দেন তিনি। ২০১০ সাল মুক্তিযোদ্ধায় কাটান তিনি।
২০১১-২০১৪ শেখ রাসেলে কাটিয়ে ২০১৫ সালে আবারো ব্রাদার্স ইউনিয়ন এ আসেন বিপ্লব।
২০১৭-১৮ শেখ রাসেলে কাটিয়ে ২০১৯ সালে আবারো ব্রাদার্স এ আসেন প্রতিপক্ষের আক্রমন ভাগের আতঙ্ক বিপ্লব।
এবং ২০১৯ সালেই নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানেন বিপ্লব ভট্টাচার্য। টোটাল ৮ টি সাফে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন বিপ্লব।
১৯৯৯ এর ৮ম সাফ গেমসের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দল এবং ২০০৩ এর সাফ চ্যাম্পিয়শীপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন বিপ্লব ভট্টাচার্য।ছিলেন ১৯৯৯ সাফ গেমসের সেরা গোলকীপার।
বয়সভিত্তিক অনুর্ধ্ব -১৯ এবং অনুর্ধ্ব -২৩ দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন লাকসামের ছেলে বিপ্লব।
২০১১ সালে ছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন এবং ক্যাপ্টেন্সি করেছেন আবাহনী ও শেখ রাসেলে।
আবাহনীর হ্যাট্রিক বিপিএল জয়ী টিমে এবং শেখ রাসেলের ট্রেবল জয়ী টিমেও ছিলেন বিপ্লব।
২০০২ এবং ২০০৬ সালের বাংলাদেশের বর্ষসেরা ফুটবলার ছিলেন তিনি।
বর্তমানে ফুটবল নিয়েই কাজ করছেন বিপ্লব। এ লাইসেন্স ধারী এই কোচ রয়েছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কোচিং প্যানেলে।
তিনি ইচ্ছে পোষণ করেছেন জাতীয় দলের হয়ে কাজ করার, এবং দেশের বাইরেও কাজ করার সুযোগ পেলে তা কাজে লাগানোর ইচ্ছে রয়েছে তার।
নিজের ক্যারিয়ারে নানান চড়াই উৎরাই পেরুতে হয়েছে বিপ্লব কে। নিজের সামর্থ্যের জোরে, হার না মানা মনোভাব এবং ধৈর্য ও পরিশ্রমের জোরেই আজকের বিপ্লবকে চিনে দেশবাসী।
যদিও মিডিয়ার সামনে খুব কমই আসা হয়েছে সময়ের অন্যতম এই সেরা গোলকীপার কে।
কিন্তু তবু তিনি ছিলেন মিডিয়ার সুদৃষ্টিতে।
হার না মানা এই যোদ্ধা দেশকে দেশের ফুটবল কে দিয়েছেন অনেক কিছুই।
বিপ্লব-আমিনুল এর গোলকিপিং জুটি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা জুটি হিসেবে আখ্যায়িত। তাদের দুইজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিজেদের যায়গা পোক্ত করার জন্য ব্যাটার পারফরম্যান্স প্রদানের লড়াই সুরক্ষা দিয়েছিলো দেশের গোলপোস্ট কে।
আবার আরেকজন আমিনুল আরেকজন বিপ্লব হয়ত জন্ম নিবে না, কিন্তু আমরা আশা রাখি বিপ্লবের কোনো ছাত্র বিপ্লব বিদ্যায় উজ্জীবিত হয়ে আগত হবে বাংলার ফুটবলে। দেয়াল তুলে দাঁড়াবে আমাদের গোলবারে। রুখবে প্রতিপক্ষের আক্রমন। বুক চিতিয়ে লড়াই করবে দেশের স্বার্থে।