From the archive, 18th July, 2021
𝐓𝐡𝐞 𝐅𝐨𝐫𝐞𝐢𝐠𝐧 𝐁𝐚𝐧𝐠𝐥𝐚 𝐓𝐢𝐠𝐞𝐫:𝐓𝐚𝐫𝐢𝐪 𝐊𝐚𝐳𝐢
সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকার পরও যখন কিছু বিশ্রী জঞ্জালের কারণে আপনি আপনার সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারবেন না তখন আপনি হতাশ হবেন অবশ্যই। তবে বিধাতা কখনো কখনো মুখ তুলে তাকায়। সুযোগ করে দেয় সেই জঞ্জাল-আবর্জনাগুলোকে পুড়িয়ে নিজেকে প্রমাণের।
তারিক কাজী, সুদুর ফিনল্যান্ড থেকে থেকে যেদিন এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে পা ফেলেছিলেন সেদিন থেকেই তিনি মনে প্রাণে বাংলাদেশী। সেদিন থেকেই তিনি বাংলার ফুটবলের এক নতুন সূর্যোদয়। সেদিন থেকেই তিনি বাংলার রক্ষণদূর্গের এক অনন্য ভরসার নাম। এইখানে তিনি এসছিলেন তাকে প্রমাণ করতে না, তিনি এসেছিলেন তার দ্বারা পূর্বে ইউরোপের মাটিতে যা প্রমাণিত হয়েছিল তার প্রতিফলন ঘটাতে।
শুরু থেকেই এক বাজে সিণ্ডিকেটের কবলে পড়েন তারিক। দিনের পর দিন সাইড বেঞ্চে বসে কাটাতে থাকেন । তারপর এলো জাতীয় দলের একাদশের ঘোষণা। নাম নেই তারিকের। ভক্ত-সমর্থকদের তীব্র ক্ষোভ। তবে তথাকথিত উপরমহলের সাফ কথা; ইউয়েফা ইউরোপা লীগে খেলা তারিককে স্বনামধন্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে খেলে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে জাতীয় দলে আসতে হবে। তবে তারিক দমে যাননি। ভাগ্য-বিধাতাও যেনো সাথে ছিলেন। সুযোগ মিললো তারিকের। কিংস একাদশে হলেন নিয়মিত এবং তারপর সেখান থেকে জাতীয় দল। সেই কিংসের একাদশে নিয়মিত হবার পর থেকে ওয়ার্ল্ডকাপ কোয়ালিফাইংয়ের এই তিনটি ম্যাচ, প্রতিটি ম্যাচেই অনবদ্য তারিকের পারফরম্যান্স যেনো সেসব সিন্ডিকেট করা ছোটলোকদের গালে একেকটা চপেটাঘাত।
এবার আসি তার পারফরম্যান্স এর ব্যাপারে। তারিক কাজী বসুন্ধরার হয়ে এই সিজনে ড্যেবু করেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। বসুন্ধরার হয়ে প্রথম ম্যাচে তিনি উপরে উঠে খেলার সুযোগ পান ডিফেন্ডিং এর মাঝখানে। প্রধানত তিনি একটি উডওয়ার্ক শট নেন। কাজীর এসিস্টও রয়েছে বসুন্ধরার হয়ে।শারীরিক গঠন ও পজিশনাল সেন্স এর মিশ্রণে তারিক কাজীই ছিলেন ফেভারিট রাইটব্যাকের জন্য;কারণ বিশ্বনাথকে ছাড়ে নি বসুন্ধরা। এই সুযোগকেই হাড়ে হাড়ে কাজে লাগালেন তারিক কাজী। কিছুদিন পরে তিনি কাতারে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম বার ম্যাচ খেলতে নামেন। তিনটি ম্যাচেই তার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। প্রথম ম্যাচে তিনি আফগানিস্তানকে কড়া জবাব দেন এবং দেশ ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে। সেই ম্যাচে ফারশাদ নূরসহ বাদ বাকিদের ডান সাইডে একেবার পকেট করে রাখেন কাজী। ২য় ম্যাচেও তিনি নিজের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ৩য় ম্যাচে তাঁর পজিশন চেঞ্জ হয় এবং অতিরিক্ত ডিফেন্সিভ খেলার কারণে কাজীর বেশি কিছু করার সুযোগ ছিলো না মিডফিল্ড এ।
তাঁর স্ট্যাটিস্টিক্স ও খেলার দিকে নজর দিলে দেখা যায়,বাংলার রাইটব্যাক পজিশনটা অনেক দিনের দখলে রাখার জন্যই কাজী এসেছেন। তাঁর বডি ট্যাকল,ক্লিয়ারেন্স,পজিশন সেন্স এর কারণে বাংলাদেশ প্রথম দুই ম্যাচে ডান দিকে তেমন কোনো সমস্যায় পড়ে নি। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচেই কোচ বুঝতে পারেন ডানদিকে কাজীর প্রয়োজনীয়তা;কেননা তিন গোলের দুইটির সূচনা হয় সেই ডান দিক থেকে। কাজী প্রথম ম্যাচে ক্লিয়ারেন্স,ইন্টারসেপশন,এরিয়াল ডুয়েল-সব ক্ষেত্রেই সফল ছিলেন।২য় ম্যাচেও অসাধারণ ছিলেন তিনি। ডান দিকে বিপিন সিং এবং সুনীল ছেত্রিকে প্রথমার্ধে নাকানি চুবানিও খাইয়েছিলেন। খোদ এক ভারতীয় সমর্থক স্বীকার করে নেন কাজীকে অসাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে।
এই কাজীদের হাত ধরেই ফের ফাগুন আসুক বাংলার ফুটবলে!