কেন অবহেলিত চট্টগ্রাম !

 


বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম শহর এবং অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি খ্যাত পরিচিত বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। 

তবে খেলাধুলায় যেন এখানে ঠিক উল্টো চিত্র। দিনকে-দিন ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে বাণিজ্যিক রাজধানী নামে সুপরিচিত আমাদের চট্রগ্রাম।চট্টগ্রামের নামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ খেলা ক্লাব আছে চট্টগ্রাম আবাহনী যাদের জন্ম আবার এই মাটিতেই। একসময়ে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামটি ছিল তাদের হোম ভেন্যু। বাফুফের সিদ্ধান্তে এবং চট্টগ্রাম আবাহনীর স্বদিচ্ছার অভাবে চট্রগ্রাম একেবারেই ফুটবল বঞ্চিত শহরে রূপ নিয়েছে। ২০২০ সালের পর প্রিমিয়ার লীগ খেলাও বন্ধ হয়ে যায় এই মাঠে।

ফুটবল যে কতটা জনপ্রিয় চট্টগ্রামে তা দেখতে হলে ফিরে যেতে হবে ২০১৫ থেকে ২০১৯, এই সময়ে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেখ কামাল গোল্ড কাপের ১ম আসর থেকে উপচে পড়া মানুষের ভীড় ছিলো মনে রাখার মতো। অবশ্য ২০১৫ সালে প্রথম আসর বসেছিলো শেখ কামাল ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব কাপে নামে। এখনও মনে আছে, ফাইনালে টিকিট কাটার পরও মাঠে ঢুকতে না পেরে বিষণ্ণ মনে বাসায় ফেরত এসেছিলাম। অন্যদিকে ২য় আসরের কোনো এক ম্যাচে মাঠে ঢুকতে না পেরে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে সমর্থকদের। লালখান বাজার থেকে কাজির দেউড়ি মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় প্রশাসন থেকে। সমুদ্রসম মানুষের সমাগম নিশ্চয়ই মনে রাখবে এই চট্টলাবাসী। এই টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে মানুষের মধ্যে ফুটবল নিয়ে একটা ফেস্টিভ কাজ করেছিল। ২০১৯ সালের ফাইনালের স্মৃতিটাও এখনও উজ্জ্বল। স্টেডিয়ামের উত্তর পাশের গেইট ভেঙে হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করেছিল চোখের সামনেই। এরপর এই শহর আর কোনো বড় ধরনের ফুটবল টুর্নামেন্ট দেখেনি।

চট্টগ্রামে কোনো আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ হয় না, এতবড় শহরে সব সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, ভাবতেই আশ্চর্য লাগে! আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো দূরে থাক, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের খেলাও হয়না এখন বিভাগীয় শহরটিতে। অত্যন্ত দু:খের বিষয় এই যে, চট্টগ্রাম আবাহনীই নাকি এই শহরে খেলতে চায়না! অথচ তারা হোম এডভান্টেজ কাজে লাগিয়ে ভালো ফলাফল পেতে পারত। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের ফ্ল্যাড লাইট এখনো সচল আছে। ফ্ল্যাড লাইট যখন জ্বলে উঠে তার আলোতে শহরের প্রাণকেন্দ্রটি যেন প্রাণ ফিরে পায়।

এম এ আজিজের মাঠটির আউটফিল্ডটি মানসম্মত ও তূলনামূলক ভালোই। চট্টগ্রামে যাতায়াতের জন্যে ফ্লাইট ব্যবস্থা আছে, আবাসনের জন্যে মাঠ সংলগ্ন ৫ তারকা হোটেল আছে। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি পড়লে আন্তর্জাতিক ম্যাচও মাঠে গড়ানো সম্ভব। প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের পাশাপাশি চট্রগ্রামে কর্ণফুলী টানেল হয়েছে, কিছুদিন আগে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হলো, বড় বড় ফ্লাইওভার হলো। শুধুই কি মাঠের অভাব নাকি দূরদর্শীতার অভাব??

বাণিজ্য কিংবা অর্থের পাশাপাশি ক্রীড়াজগতকেও সমৃদ্ধ করতে হবে। আর ফুটবল কি বাণিজ্যের বাইরে কিছু! বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্লোবাল স্পোর্টস ফুটবল।

বর্তমানে চট্টগ্রামে ফুটবলের জনপ্রিয়তার কি অবস্থা তা জানতে হলে হালের খবর রাখতে হবে। মাঠের বিকল্প সমাধান হিসেবে প্রায় ৬০টিরও অধিক টার্ফ গড়ে উঠেছে। একটা নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে ফুটবলকে ভালোবেসে। কিন্তু তাদের প্রতিভার যত্ন নিয়ে পরিচর্যাই কে করবে অথবা কেই-বা তাদের প্রতিভা খুঁজে বের করবে।

এই জনগোষ্ঠীর প্রতিভা মেলে ধরার জায়গাগুলোও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন এর বাহিরে উপজেলা শহরগুলোতেও বড় বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন হচ্ছে যেখানে হাজার হাজার দর্শকদের উপস্থিতি বলে দেয় চট্টগ্রামের মানুষ ফুটবলকে ভালোবাসে। ক্রীড়ামোদী মানুষদের নির্মল বিনোদনের জায়গায় এখনও ফুটবল জায়গা করে আছে।

ক্রিকেটে সাগরিকার জহুর আহম্মেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম আছে, তবুও এম আজিজ স্টেডিয়ামটিকে ফুটবল মাঠ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছেনা। সারা বছর জেলার ও বিভাগীয় ক্রিকেট লীগ হয় এখানে। ক্রিকেটের পিচ ঢেকে দিয়ে বিভাগীয় ফুটবলও চলে! একটি মাঠ অন্তত ফুটবলের জন্য হোক।

একটি প্রাচীন বৃহত্তম শহর যখন ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে পিছিয়ে পড়ছে, এটা সত্যিই নীতিনির্ধারকদের মাথা ব্যথা হওয়ার কারণ হওয়ার কথা। ক্রীড়াজগতের এই হতাশা হাহাকার দেখার কেউ কি নেই বীর চট্টলায়?? এখনই সময় ক্রীড়াবিদদের এগিয়ে আসার।

এক মঞ্চে

একসাথে আওয়াজ উঠুক

"চট্টগ্রামে ফিরুক প্রাণের ফুটবল"

ঢাকাকেন্দ্রিক ফুটবলকে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে ফুটবলের উন্মাদনা চাষাবাদ করতে হবে। তবেই জোর দিয়ে বলা যাবে, "ফুটবলের সুদিন ফিরছে"।

Previous Post Next Post

Advert1

Advert2

نموذج الاتصال